এমন একদিন ছিল যেদিন পাশ্চাত্য সভ্যতা তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের মহিমায় পৃথিবীকে চমৎকৃত করে দিয়েছিল। তার আবিষ্কারসমূহের দ্বারা গোটা পৃথিবী তার বশে এনেছিল। কিন্তু ইদানীং পাশ্চাত্য সভ্যতা এক শোচনীয় পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার অস্তিত্বের ভিত ধ্বসে গিয়েছে। তার আদর্শিক বালাখানা আজ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছে। তার রাজনৈতিক জীবন-প্রণালী আজ বৈশিষ্ট্যহীন হয়ে গিয়েছে। আজ সেখানে লাখ লাখ লোক বেকারত্বের অভিশাপে ভুগছে। প্রতি বছর হাজার হাজার শ্রমিক তাদের অভাব-অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে রাস্তায় নামছে। তাদের সামাজিক আইন-কানুনগুলো আজ যথাযথ কার্যকর হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ বিরাজ করছে চরম অশান্তি বিদ্রোহ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা তো সেখানে লেগেই আছে।
আজ পাশ্চাত্যের লোকেরা নিজেদের সমাজব্যবস্থার এই শোচনীয় পরিণতি দেখে হয়রান ও পেরেশান। তারা আজ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আজ তাদের অগ্রগতির রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সম্মেলনের পর সম্মেলন, চুক্তির পর চুক্তি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু কোনো সুরাহা বের হচ্ছে না। তাদের মধ্যে এ আজ কোনো প্রকার স্পৃহা নেই। আন্তর্জাতিক বিশ্বে আজ তাদের অবস্থা হিউয়ে একান্তই শোচনীয়। আজ তাদের অবস্থা জড় পদার্থের সাথে তুলনা করা এংকর যেতে পারে, যার কোনো সঞ্চালনশক্তি নেই। তেমনিভাবে আজ পাশ্চাত্যাইনা শক্তিবর্গের কোনো ইচ্ছাই কার্যকর হচ্ছে না।
আজ পৃথিবীর অনেক ক্ষুদ্র-বৃহৎ শক্তিই পাশ্চাত্যের এই শোচনীয় পরাজয়ের সুযোগে এক ঘা বসিয়ে দিচ্ছে। শুধু পাশ্চাত্য দেশসমূহেই নয়, এমনি করে আজ গোটা পৃথিবীতে অশান্তি নেমে এসেছে। আজ পৃথিবীকে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, তরঙ্গভিঘাতে উন্মত্ত একটি সমুদ্রের ভাসমান জ জাহাজের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।

আজ গোটা পৃথিবী সমস্যায় জর্জরিত। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ আজ শান্তির সন্ধানে দিশেহারা। পাশ্চাত্য সভ্যতা পৃথিবীর মধ্যে যে বস্তুবাদিতা, স্বার্থপূজা ও সংঘাতের বীজ বপন করে গেছে, আজ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ তারই ফল ভোগ করছে। তাই পাশ্চাত্য জগৎই আজ সে সত্য-সনাতন জীবনব্যবস্থার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে যা মানবের জীবনে শান্তি এনে দিতে পারে। পৃথিবীতে এমন একটা সময়ও অতিবাহিত হয়েছে, যখন তার শাসনক্ষমতা প্রাচ্যবাসীর হাতে নিবদ্ধ ছিল। অতঃপর রোমক এবং গ্রিকদের মাধ্যমে তা পাশ্চাত্যের কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। এরপরই হযরত মুসা, হযরত ঈসা ও হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব হলো এবং দ্বিতীয়বারের মতো পৃথিবীর কর্তৃত্ব প্রাচ্যবাসীর হাতে এসে গেল। এরপর প্রাচ্যের জীবনযাত্রায় শুরু হলো আবার মন্দাভাব।
অন্যপক্ষে পাশ্চাত্যে সৃষ্টি হলো নব জাগরণ। এইভাবে আল্লাহর সুপ্তি অপরিবর্তিত রইল এবং নেতৃত্ব পুনরায় পাশ্চাত্যবাসীর হাতের মুঠোয় এসে গেল। তারপর শুরু হলো আমাদের উপর অকথ্য জুলুম ও নির্যাতন। ক্ষমতার মোহে পাশ্চাত্যের লোকেরা গোটা পৃথিবীর বুকে একরাশ ত্রাস সৃষ্টি করে তুলল এবং তাদের সে ত্রাস-সন্ত্রাস অব্যাহতভাবে চলল। আজ প্রয়োজন হচ্ছে প্রাচ্যের বুকে একটি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের আবির্ভাবের, যে নেতৃত্ব সামনে অগ্রসর হবে ইসলামের ঝান্ডা বহন করে এবং কোরআনকে সঙ্গী করে।
শুধু তাই নয়, এ নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হবে ঈমানের বলে বলীয়ান একটি সৈন্যদল। আর এভাবেই গোটা পৃথিবীতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়বে। আর সাথে সাথে গোটা বিশ্ব শান্তি, সুখ ও স্বাচ্ছন্দে ভরপুর হয়ে যাবে।
খোদার অশেষ শোকর, যিনি আমাদের তার পথে চলার মতো পথ দেখিয়েছেন। তিনি যদি আমাদের পথ না দেখাতেন, তাহলে আমরা কোথা থেকে এ পথের সন্ধান পেতাম!
এটা কোনো খেয়ালীপনার বিষয় নয়। এটা ইতিহাসের অমোঘ বিধান। আল্লাহর দীনের এ দায়িত্ব যদি আমাদের দ্বারা পূরণ হয়, তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা এ পৃথিবীতে এমন সব লোকের সমাবেশ টাবেন, যারা তার প্রিয়পাত্র বলে নিজেদের পরিচয় দেবে এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীনের দায়িত্ব পালন করবে। তারা মুমিনদের বেলায় অতিশয় দয়ালু এবং কাফেরদের বেলায় হবে অত্যন্ত কঠোর।তারা আল্লাহর পথে জিহাদে অবতীর্ণ হবে এবং যে কোনো দুঃখ-কষ্টের জন্যে তৈরি থাকবে। এটা একান্তভাবেই আল্লাহর ফজল ও করম। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর মুসলমান হিসেবে এ ফজল ও করমের অধিকারী তো আমাদেরই হওয়ার কথা। এ ইজ্জত ও গৌরব যদি আমাদেরই ভাগ্যাকাশে উদিত হতো, তাহলে কতই না ভালো হত .
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.