উন্নয়নশীল অথবা উন্নত জাতিগুলোর জন্য সৈন্যবাহিনী অত্যাবশ্যক। আর অটুট স্বাস্থ্যের ও সবলতার উপরই সৈন্যবাহিনীর শক্তি নির্ভরশীল। এই জন্য কোরআন পাক এই বিষয়টি উপেক্ষা না করে এর গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে।এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত তালুত বাদশার কথা স্মর্তব্য। তাঁকে জ্ঞান-বুদ্ধিতে সবলতা দান করার সাথে শারীরিক শক্তি-সামর্থ্যও দান করা হয়েছিল।পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
قَالَ إِنَّ اللهَ اصْطَفَهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَةً بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ وَاللَّهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ .
অর্থ : আল্লাহ তাআলা তোমাদের সরদারি ও নেতৃত্বের জন্য সে লোকটিকেই নির্বাচিত করেছেন আর তাকে জ্ঞান বুদ্ধি ও শারীরিক শক্তিও দান করেছেন।’
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন। তিনি যেভাবে আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতি জোর দিতেন, ঠিক তেমনিভাবেই শারীরিক শক্তি তথা স্বাস্থ্য রক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামদেরও এই ব্যাপারে বিশেষ তাকীদ দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে একটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে
المؤمن القوي، خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف
অর্থ: একজন শক্তিশালী মুমিন একজন দুর্বল মুমিনের চেয়ে আল্লাহর নিকট অনেক উত্তম ও প্রিয়।’

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,
فإن الجسدك عليك حقا
অর্থ: তোমার উপর তোমার শরীরেরও কিছু অধিকার রয়েছে।
শুধু এখানেই শেষ নয়। ইসলামে স্বাস্থ্য রক্ষার যাবতীয় রীতিনীতি ও পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। সাবধানতা চিকিৎসার অর্ধেক। আর সে বিষয়েও কুরআনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এসেছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
كُلُوا مِنْ ثَمَرِةٍ إِذَا أَثْمَرَ وَاتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
অর্থ: যখন ফসল হয় তখন তোমরা সে ফসল থেকে খাও এবং ফসল কাটার দিন তার হক্ব আদায় করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।
এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন। তিনি সবসময় সুমিষ্ট এবং স্বচ্ছ পানি পানের পক্ষপাতি ছিলেন। এইভাবে বদ্ধ পানিতে পায়খানা-প্রসাব করার ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। যেখানে কলেরা-বসন্ত ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে, সে এলাকা সম্বন্ধে মহানবীর বক্তব্য হচ্ছে, ‘যারা সেখানে আছে, তারা অন্যত্র যেতে পারবে না, আর যারা দূরে আছে তারাও যেন সেখানে না আসে। দুরারোগ্য ব্যাধির ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন, কুষ্ঠ রোগীর সাহচর্য থেকে দূরে অবস্থান, তীর ও বর্শা খেলা এবং অশ্বারোহণ প্রভৃতির ব্যবস্থা সম্পর্কে তাকীদ করা হয়েছে।
মহানবী বলেছেন,
من تَعَلَّمَ الرَّئي ثم تركه فليس منا
অর্থ: যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপ করা শিক্ষা গ্রহণ করেছে অতঃপর তা ভুলে গিয়েছে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’
এমনিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির নামে বাইরের সমাজ ত্যাগ করে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসে থাকা, বৈরাগ্য গ্রহণ করা, নিজেকে বাঁচিয়ে চলা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে নিষেধ ধরা হয়েছে। মহানবী প্রতিটি কাজের ব্যাপারে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করার তাকীদ করেছেন। উপরে আলোচিত এইসব কথাগুলো থেকে এই কথাই প্রমাণিত হয়, ইসলাম মুসলমানদের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে কতটা সজাগ দৃষ্টি প্রদান করেছে, কতটা তাকীদ করেছে।
শহীদ হাসানুল বান্না রাহ