রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে আনদায ও অনুমান করা যায়, দাজ্জাল বড় আহ্বানকারী হবে। গরম জোশওয়ালা হবে। উৎসুক ও উদ্যমী হবে। অনেক বেশি চতুর হবে। ঈমান ও ইসলামের মোকাবেলায় কুফর ও অবাধ্যতার প্রসার ঘটাবে। ন্যায় ও ইনসাফের বদলে অন্যায় ও অনাচার ছড়াবে। মানবতার শান্তি কল্যাণ সফলতাকে বরবাদ করে দেবে। বিদ্রোহ বিরোধিতা ও সীমালঙ্ঘনকারী হবে। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান:
فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنْ الشَّبُهَاتِ أَوْ لِمَا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشَّبُهَاتِ
অর্থ: আল্লাহর শপথ! মানুষ দাজ্জালের কাছে আসবে। মনে করবে, সে মুমিন। এর পর লোকেরা তার অনুসারী হয়ে যাবে, ওই সব শোবা-সন্দেহের কারণে, যা সে তাদের দিলের মধ্যে পয়দা করে দেবে। -(সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৬২)
দাজ্জালের বিষয়টা এত বেশি সীমা ছাড়াবে এবং তার প্রচার-প্রসার এত ব্যাপক হবে, কোনো ঘর ও খান্দান তার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে না। নারী-পুরুষ-বাচ্চা কেউ তার থেকে নিরাপদ থাকবে না। দাজ্জালের প্রভাব ও আকৃষ্টতা থেকে কেউই বাঁচতে পারবে না।
ঘরের যিম্মাদার ও পুরুষ ব্যক্তি পরিবারের লোকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। নিজের স্ত্রী ছেলে-মেয়ে ভাই-বোন কাউকে কন্ট্রোল করতে পারবে না। রুখতে পারবে না। বাধাও দিতে পারবে না। পরিবারের সবাই বেপরোয়া হয়ে যাবে। লাগামহীন উটের মতো যার যেদিকে খুশি ছুটবে। যেভাবে খুশি চলবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান:
يَنْزِلُ الدَّجَّالُ بِهَذِهِ السَّبَخَةِ فَيَكُونُ آخِرُ مَنْ يَخْرُجُ إِلَيْهِ النِّسَاءَ حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ لَيَرْجِعُ إِلَى أُمِّهِ وَأُخْتِهِ وَعَمَّتِهِ فَيُوثِقُهَا رِبَاطًا مَخَافَةَ أَنْ تَخْرُجَ إِلَيْهِ.
অর্থ: দাজ্জাল নীরব-নিস্তব্ধ মারকানা নামক স্থানে আসবে। শেষে তার কাছে মহিলারা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হয়ে ছুটে যাবে। এমনকি লোকেরা নিজেদের মা, মেয়ে, বোন ও ফুফুকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে। এ ভয় ও আতঙ্কে, তারা যেন দাজ্জালের কাছে না যায়। (আলমুজামুল কাবির লিত-তবরানি: ১৩০১৯)

দাজ্জাল আবির্ভাবের আগে সমাজ ও আধুনিক সোসাইটির আখলাকি অধঃপতন ও চারিত্রিক অবক্ষয় চরম তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
فَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ فِي خِفَّةِ الطَّيْرِ وَأَحْلامِ السَّبَاعِ لَا يَعْرِفُونَ مَعْرُوفًا وَلَا يُنْكِرُونَ مُنْكَرًا.
অর্থ: তখন শুধু খারাপ লোকেরাই থাকবে। যারা চড়ুই পাখির মতো হালকা এবং হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের মতো মন্দ-স্বভাবচারী হবে। তারা তখন ভালোকে ভালো মনে করবে না, খারাপকে খারাপ মনে করবে না।
-(সহিহ মুসলিম: ৫২৩৩)
বর্তমান ভোগবাদী নাস্তিক্যবাদ কুফুরি সভ্যতাই হল সেই জীবন্ত ছবি-চিত্র, যার মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল আসার পূর্ব-পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে গেছেন। তার আসার পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের নকশা-নমুনাও বলে গেছেন। দাজ্জালের বিচরণ কেন্দ্র ও প্রধান দুর্গগুলোও একদম স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে গেছেন।
আসলে এটি নবুয়তের একটি চিরন্তন ও স্থায়ী মোজেযা; এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কম শব্দে ব্যাপক অর্থের সারগর্ভময় কথা বলার একটি উত্তম-শ্রেষ্ঠ নমুনা, যাঁর বাণীসমূহের আশ্চর্যতা ও বিস্ময়তা কখনো ফুরাবে না, যাঁর কথামালার পূর্ণতা ও পূর্ণাঙ্গতা কখনো শেষ হবে না, যাঁর পবিত্র যবান নিঃসৃত বাক্যগুলোর সজীবতা ও মিষ্টতা কখনো কমবে না, যাঁর অমিয় কথাগুলো মুসলিম-অমুসলিম কারো জন্যই মুগ্ধতা ও আকৃষ্টতা সৃষ্টিতে কখনো ফারাক হয় না, হবেও না।
একদিকে বর্তমান সভ্যতা চড়ুই পাখির মতো হালকাপনাভাবে ঘুরছে। বিমান নিয়ে আকাশে উড়ছে। বাতাসকে অধীন করে ব্যবহার করছে। এমনকি আধুনিক সভ্যতা বর্তমান প্রজন্মকে পাখির চেয়েও গতিশীল বানিয়ে দিয়েছে। অপর দিকে এ আধুনিক সভ্যতার মধ্যেই রয়েছে, খুন-খারাবি, পাপাচার-স্বৈরাচার। এমন নষ্ট-ভ্রষ্ট মানুষও রয়েছে, যারা সমগ্র দুনিয়াকে অস্থির অশান্ত করে রাখতে কোনো দ্বিধা বোধ করে না। অনাচার ও অত্যাচারে, বিপন্ন ও বিপর্যয়ে পৃথিবীর সব কটি দেশ ও জাতিকে নিঃশেষ করে দিতেও কোনো কষ্ট-যাতনা’ অনুভব করে না।
তারা শুধু সবুজ ফসলের মাঠ, ফলের বাগান আর ফুলে ভরা বাগিচাকেই বরবাদ করে না, বরং সুন্দর জনপদকেও ধ্বংস করে দেয়। মানববসতিকে তারা এমন নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে, ইতিহাসে এমন ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত ইহুদি ছাড়া আর কারো নেই। তাদের কাছে আরাম-আয়েশের, আনন্দ-উল্লাসের এবং ভোগ-বিলাসের সুযোগ উপায়-উপকরণ ও ব্যবস্থাপনার এত আধিক্য ও প্রাচুর্য রয়েছে, অতীত ইতিহাসে এত ব্যাপক, এত সহজ, এত সুলভ, এত অবাধ আর কারো ছিল না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
وَهُمْ فِي ذَلِكَ دَارٌ رِزْقُهُمْ حَسَنُ عَيْشُهُمْ.
অর্থ: সে সময় তাদের সম্পদ বৃষ্টির মতো বর্ষিত হতে থাকবে এবং জীবনের দরকারি সবকিছু প্রস্তুত ও ব্যবস্থাকৃত পাবে। (সহিহ মুসলিম: ৫২৩৩)
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.