আমরা যখন আমাদের গোটা জাতিকে ইসলামের দিকে পরিচালিত করব তখন আমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই উপকৃত ও লাভবান হব। ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রথম থেকেই আমাদের নিকট একটি পরীক্ষিত সত্য দীনরূপে প্রমাণিত। এর উপযোগিতা ও বিশুদ্ধতার ব্যাপারে ইতিহাস সাক্ষী।
এ জীবনাদর্শ অতীতে এমন একটি উম্মত বা জাতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, যে জাতি বা উম্মত সবচেয়ে উত্তম, সবচেয়ে সহানুভূতিশীল এবং মানবতার কল্যাণে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী বলে প্রমাণিত হয়েছে। সে জীবনব্যবস্থাটি গ্রহণ করা, তাকে উপলব্ধি ও অনুধাবন করা এবং তারই ডাকে সাড়া দেওয়া সকলের জন্যই অতীব সহজ বলে অতীতেও প্রমাণিত হয়েছে এবং বর্তমানেও প্রমাণিত হচ্ছে।
যেদিন আমরা এইভাবে ইসলামী আইনের উপকারিতা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হব, সেদিন আমরা এই অন্ধ জাতীয়তাবাদের মিথ্যা গৌরবে নিজেদের আবদ্ধ করব না। কারণ, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের জীবনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় আমাদের ইসলামী মূলনীতিগুলো বাস্তবায়িত হোক। বিদেশিদের আদর্শ ও রীতি-নীতি আমাদের জন্য পরিত্যাজ্য হওয়া আবশ্যক। এমনি করে আমরা যদি নিজেদের আদর্শ পুরোপুরি গ্রহণ ও বিদেশি আদর্শকে বর্জন করতে পারি, তাহলে প্রকৃত অর্থে আমরা রাজনৈতিক আজাদী ছাড়াও জাতীয় ও সাংস্কৃতিক আজাদী হাসিল করতে সক্ষম হব।বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ইসলামী মূলনীতি ও আইনসমূহ বাস্তবায়িত হলে আরব তথা গোটা ইসলামী বিশ্বের ঐক্য প্রতিষ্ঠা সহজতর হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আর এর ফলে গোটা ইসলামী দুনিয়ার সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
তখন গোটা বিশ্বের মুসলমান আন্তরিকতা ও হৃদ্যতার সাথে আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে এবং ভ্রাতৃত্বের দাবীতেই তারা আমাদের সাহায্যের জন্য অগ্রসর হবে। আর আমাদের ব্যাপারে তারা অনুরূপ আশা করতে পারবে। এইভাবে বিশ্ব-মুসলিমী ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠার ফলে আমাদের পারস্পরিক ক্ষেত্রে এমনি কতকগুলো সুযোগ সৃষ্টি হবে, যার সত্যতা অস্বীকার করা যায় না।

দ্বিতীয় কথা হলো, ইসলামী আইন একটি ব্যাপকভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই আইন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। বাস্তব ক্ষেত্রে ইসলামী আইন-কানুনই আমাদের জীবনের সার্বিক কল্যাণের নিশ্চয়তা দিতে পারে। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এ আইনই আমাদের একমাত্র চালিকাশক্তি।
ইসলামের এই বৈশিষ্ট্য একক। এখানে কোনো জীবনবিধানের প্রবেশাধিকার নেই। ইসলামী জীবনবিধান আমাদের জাতীয় জীবনের ক্ষেত্রে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড সরবরাহ করে থাকে। আর তা হচ্ছে, যা কিছু ভালো তা গ্রহণ করো এবং যা কিছু মন্দ তা বর্জন করো; যা কিছু কল্যাণকর তা গ্রহণ করো এবং যা কিছু ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত তা বর্জন করো।
আমরা যেদিন এ পথে চলতে অভ্যস্ত হব, সেদিন আমাদের জীবনের প্যাঁচালো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বৈকি। আজ পৃথিবীর জাতিগুলো যেসব সমস্যায় হাবু-ডুবু খাচ্ছে ইসলামী আইনের প্রবর্তন হলে পৃথিবীতে সে সমস্যা আদৌ স্থান পাবে না। এ পথ সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান না থাকার দরুনই আজ তারা হাজারো সমস্যায় দিনাতিপাত করছে। আধুনিক বিশ্বে সৃষ্ট অনেক সমস্যা, যা আধুনিক জগৎ সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসলাম অতি সহজ পন্থায়ই তার সমাধান দিতে পারছে।
বিশেষত, যখন আমরা এ পথে চলতে আরম্ভ করব, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপর অসংখ্য রহমত ও সাহায্য অবতীর্ণ হতে থাকবে। আর আল্লাহই একমাত্র সত্তা, যিনি আমাদের দুর্বল মুহূর্তে শক্তি প্রদান করবেন। আমাদের দুঃখ-দুর্দশার সময় আমাদের আশ্রয় প্রদান করবেন। আমাদের কঠিন কঠিন সমস্যা সহজ করে দেবেন এবং আমরা যাতে উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করতে পারি তার জন্য আমাদের অহরহ সাহায্য প্রদান করবেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ إِنْ تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
অর্থ: আর তোমরা কাফেরদের উপর হামলা পরিচালনার ব্যাপারে মোটেই নিরাশ হয়ো না। তোমরা যদি দুঃখ-কষ্ট পেয়ে থাকো তাহলে মনে রেখো, তারাও তোমাদের মতোই অনেক লাঞ্ছনা পেয়েছে। আর তোমরা তো আল্লাহর নিকট থেকে এমন কিছু আশা করো, যা তারা করে না। আর আল্লাহই সব কিছু জানেন, সবকিছু বোঝেন।’
–
শহিদ হাসান আল বান্না